আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই- গতকাল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সারজারি থেকে কল এলো, acute abdomen এর পেশেন্ট দেখার জন্য। গিয়ে দেখি আমিনা বেগম নামের ৩৫ বছরের একজন মহিলা twisted ovarian tumour নিয়ে কাত্রাচ্ছে, স্বামী রিকশা চালক ।
তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে – এখুনি পেট খুলে টিউমার বের করতে হবে। সে কোন খরচ করতে পারবে না। বললাম, সিট ভাড়া, অপারেশন চার্জ, মাফ করানোর ব্যবস্থা করে দেব। অন্ততঃ ওষুধ এর খরচ তার বহন করতে হবে, আরও অনেকক্ষন বোঝানোর পর কন্সেন্ট পেপারে বৃদ্ধাংগুলির ছাপ দিয়ে মনে হয় ডাক্তার সমাজকে করুনা করল।
ওটি তে ঢুকার আগে বল্লাম আত্মীয় স্বজন যে কয়জন পারে খবর দিতে, রক্ত লাগবে। আমার এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও রেজিস্ট্রার অপারেশন শুরু করলেন। ল্যাপারটমি এর পর দেখা গেল ভাল রকম blood loss হয়েছে, BP ফল করছে। এনেস্থেটিস্ট বললেন, আপা রক্ত আনান কুউইক!! ইন্টার্ন ডাক্তার এসে জানালো, ম্যাডাম!! রোগির হাসব্যান্ড গায়েব।
দৌড়ে বের হয়ে সামনে পেলাম পঞ্চম বর্ষের মুবিন কে, বললাম, বাবা যেভাবে সম্ভব অন্ততঃ ২ ব্যাগ রক্ত জোগাড় কর। একই বর্ষের ছাত্র হাদী আইটেম দিতে এসেছে । রক্তের কথা শুনেই দৌড়ে আসল, ম্যাম আমি ও পজিটিভ! মূহুর্তের মধ্যে ওরা রক্ত নিয়ে এল।
ব্লাড ব্যাগ আর ক্রস ম্যাচিং এর পুরা খরচটাই ইন্টার্ণ ডাঃ বাবর তার নিজের পকেট থেকে দিল। একটু পর চতুর্থ বর্ষের রাদ রাজ্যজয় এর হাসি নিয়ে লেকচার ক্লাস মিস করে আরেক ব্যাগ রক্ত নিয়ে হাজির।
বেলা আড়াই টার দিকে সবাই হাসিমুখে ওটি থেকে বের হলাম, তখনও রোগীর স্বামী ফিরে আসে নি। উপরের চিত্রটি এ দেশের সকল ডাক্তার নামক কসাই দের প্রাত্যহিক জীবণের একটি অংশ। আল্লাহ কে প্রতিনিয়ত ধন্যবাদ জানাই তিনি আমাকে কসাই হবার এই দুর্লভ সুযোগ দান করেছেন বলে।
নিজ কে আর সৌভাগ্যবান মনে হয় যখন দেখি আমি এস.এম.সি.এইচ নামক একটা কসাইখানার কারিগর যেখান থেকে বাবর, হাদী, রাদ, মবিন এর মত আরও অনেক কসাই বের হয়ে অচেনা অজানা আমিনা দের জন্য নিজের রক্তবিন্দু দান করবে।
Dr.Nasima Akther
Associate Professor & Head
Department of Gynae & Obs
Southern Medical College & Hospital
Chittagong.
(লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত)